সূর্য কিভাবে জ্বলে উঠেছিল, কতদিন পর?

প্রতিদিন আমাদের আকাশে উদিত হওয়া সূর্য আসলে এক মহাজাগতিক বিস্ময়ের নাম, যার জন্ম ও জ্বলে ওঠার পেছনে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ ও রহস্যময় এক প্রক্রিয়া। মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে, বিগ ব্যাং নামক এক বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে। সেই মহাবিস্ফোরণের প্রায় ৯.২ বিলিয়ন বছর পর, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে, আমাদের সূর্যের জন্ম ঘটে। এটি একটি গ্যাসীয় মেঘের অন্তঃস্ফোরণ থেকে শুরু হয়, যাকে বলা হয় "মলিকুলার ক্লাউড" বা তারাগঠনের কুণ্ডলী। এই গ্যাসীয় কুয়াশায় প্রধানত হাইড্রোজেন ও হেলিয়াম ছিল, যা মহাবিশ্বের আদিতে তৈরি হয়েছিল। কোনো এক সময় বাইরের কোনো প্রভাব—হতে পারে নিকটবর্তী কোনো তারার বিস্ফোরণ—এই গ্যাসীয় মেঘকে সংকুচিত করতে শুরু করে। সংকোচনের ফলে মেঘের কেন্দ্রে ঘনত্ব ও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, এবং এক পর্যায়ে এটি একটি প্রোটোস্টার বা প্রাথমিক তারায় পরিণত হয়।

এই প্রোটোস্টারের অভ্যন্তরে সংকোচন ও ঘর্ষণের ফলে তাপমাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, কেন্দ্রস্থলে তাপমাত্রা পৌঁছে যায় প্রায় ১০ মিলিয়ন কেলভিনে। তখন শুরু হয় নিউক্লিয়ার ফিউশন, যেখানে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো একত্রিত হয়ে হেলিয়ামে রূপান্তরিত হতে থাকে। এই ফিউশন প্রক্রিয়া থেকেই নির্গত হতে থাকে বিপুল পরিমাণ শক্তি, যা সূর্যের আলো ও তাপ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে মহাশূন্যে। এর মাধ্যমেই সূর্য একটি পূর্ণাঙ্গ তারা হিসেবে "জ্বলে ওঠে" এবং তার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ফিউশন অব্যাহত থাকে।

সূর্য এখন রয়েছে তার জীবনের মাঝামাঝি পর্যায়ে, যার নাম "মেইন সিকোয়েন্স স্টেজ"। এখানে সে হাইড্রোজেনকে হেলিয়ামে রূপান্তর করে চলেছে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও ভারসাম্যপূর্ণভাবে। এই অবস্থা আরও প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর স্থায়ী হবে। এরপরে সূর্য তার জীবনের শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করবে, ফুলে উঠবে লাল দৈত্যে পরিণত হবে, এবং এক সময় নিজের বাইরের স্তরগুলো মহাশূন্যে ছড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রে রেখে যাবে একটি ক্ষুদ্র সাদা বামন।

এইভাবে, প্রায় ৯ বিলিয়ন বছরের কসমিক ইতিহাস পেরিয়ে সূর্যের উদয় এবং জ্বলে ওঠা কেবল একটি তারার জন্ম কাহিনি নয়, বরং এটি আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তিও। কারণ সূর্য না থাকলে পৃথিবী হতো জমাট বরফের একটি মৃত গ্রহ, আর প্রাণের উদ্ভব হতো অসম্ভব। সূর্য জ্বলছে বলেই আমাদের দিন শুরু হয়, জীবন বাঁচে, আর মহাবিশ্বের এই কোণায় প্রাণের বিস্ময় দেখা দেয়। সূর্যের জন্মের কাহিনি তাই কেবল জ্যোতির্বিজ্ঞান নয়, এটি আমাদের সত্তার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এক মহাজাগতিক কাব্য।

Post a Comment

মন্তব্য করতে পারেন

Previous Post Next Post