কোয়াসার — এক মহাজাগতিক বিস্ময়

আপনি কি জানেন, আমাদের মহাবিশ্বে এমন কিছু বস্তু রয়েছে, যেগুলো এতটাই উজ্জ্বল যে, একটি কোয়াসার পুরো একটি গ্যালাক্সির তুলনায় হাজার গুণ বেশি আলো নিঃসরণ করে?

এই রহস্যময় বস্তুটির নাম কোয়াসার (Quasar) — পুরো নাম Quasi-Stellar Object, অর্থাৎ “আংশিক নক্ষত্র সদৃশ বস্তু”। প্রথমবারের মতো ১৯৬০-এর দশকে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণের সময় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর সন্ধান পান। প্রথম দেখায় এগুলো একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতোই মনে হয়েছিল, কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা গেল—এগুলো মোটেও সাধারণ নক্ষত্র নয়। এরা আসলে সুদূর গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এক ধরনের অতিমাত্রায় শক্তিশালী শক্তি-নির্গমণকারী বস্তু।

প্রতিটি কোয়াসারের কেন্দ্রে থাকে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল—যার ভর সূর্যের চেয়ে কয়েক মিলিয়ন থেকে কয়েক বিলিয়ন গুণ বেশি। এই ব্ল্যাক হোল যখন তার চারপাশের গ্যাস, ধুলা ও তারাগুলিকে গ্রাস করে, তখন সেই উপাদানগুলো ব্ল্যাক হোলের চারপাশে ঘূর্ণায়মান এক ডিস্কে পরিণত হয়, যাকে বলে অ্যাক্রিশন ডিস্ক (Accretion Disk)। এই ডিস্ক থেকে প্রচণ্ড ঘর্ষণ ও তাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে নির্গত হয় বিপুল পরিমাণ রেডিও ও এক্স-রে বিকিরণ, এবং সেই সঙ্গে উজ্জ্বল আলো—যা লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূর থেকেও টেলিস্কোপে ধরা পড়ে।

কোয়াসার শুধু মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তুগুলোর একটি নয়, এটি আমাদের অতীতেরও দর্পণ। কেননা, আমরা যখন একটি কোয়াসার দেখি, আমরা আসলে লক্ষ কোটি বছর আগের এর অবস্থান দেখি—তখনকার মহাবিশ্বের চেহারা কেমন ছিল, গ্যালাক্সিগুলো কেমনভাবে গঠিত হচ্ছিল, তার একটি ইঙ্গিত আমরা পাই কোয়াসারের মাধ্যমে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, কোয়াসার গবেষণা করলে আমরা আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের অতীত সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে পারবো।

দুঃখজনক হলেও সত্য, কোয়াসার এতটাই দূরে যে, আপনি খালি চোখে বা সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখতে পারবেন না। তবে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মতো আধুনিক যন্ত্র দিয়ে এদের ছবি তোলা যায়, বিশ্লেষণ করা যায় এবং আমাদের জ্ঞানভাণ্ডারে যোগ হয় নতুন তথ্য।

দুঃখজনক হলেও সত্য, কোয়াসার এতটাই দূরে যে, আপনি খালি চোখে বা সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখতে পারবেন না। তবে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মতো আধুনিক যন্ত্র দিয়ে এদের ছবি তোলা যায়, বিশ্লেষণ করা যায় এবং আমাদের জ্ঞানভাণ্ডারে যোগ হয় নতুন তথ্য।

Post a Comment

মন্তব্য করতে পারেন

Previous Post Next Post