মহাবিশ্বের হীরার গ্রহ

মহাবিশ্ব এক রহস্যময় জায়গা। এর প্রতিটি গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি আমাদের জানার আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু কিছু গ্রহ এমন আছে, যেগুলো কল্পনাকেও হার মানায়। তেমনি এক বিস্ময়কর গ্রহ হলো ৫৫ ক্যানক্রি ই (55 Cancri e)। একে বলা হয় “হীরার গ্রহ”—কারণ এটি মূলত কার্বন দ্বারা গঠিত এবং এর অভ্যন্তরে বিশাল পরিমাণ হীরা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০৪ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা Radial Velocity Method ব্যবহার করে ৫৫ ক্যানক্রি ই আবিষ্কার করেন। এই পদ্ধতিতে নক্ষত্রের আলোর স্পেকট্রা বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় তার আশেপাশে একটি গ্রহ ঘুরছে, যার ফলে তারকা সামান্য দুলে ওঠে। এই দুলুনি থেকেই গ্রহটির উপস্থিতি ধরা পড়ে। ২০১১ সালে Yale University-এর একদল গবেষক দাবি করেন যে এই গ্রহের গঠন কার্বন-সমৃদ্ধ, এবং উচ্চ তাপ ও চাপে তা হীরাতে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। গ্রহটির অভ্যন্তরে বিশাল পরিমাণ গ্রাফাইট ও হীরা থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এই গ্রহ যদি সত্যিকারের হীরায় পরিপূর্ণ হয়, তবে তার আর্থিক মূল্য হতে পারে কোয়াড্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। প্রকার: সুপার-আর্থ (Super-Earth) আকার: পৃথিবীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বড় ঘূর্ণনকাল: ১৮ ঘণ্টায় একবার নক্ষত্র প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করে পৃষ্ঠের অবস্থা: সম্ভবত লাভার সাগর বা কঠিন পাথর বায়ুমণ্ডল: হাইড্রোজেন, হেলিয়াম, এবং কিছু হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতির ইঙ্গিত বর্তমানে NASA ও ESA-র বিভিন্ন টেলিস্কোপ যেমন Spitzer, Hubble, এবং James Webb Space Telescope (JWST) এই গ্রহটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রহটির বায়ুমণ্ডল, আবহাওয়া, এবং পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্ট ও চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। ৫৫ ক্যানক্রি ই শুধুমাত্র এক রহস্যময় গ্রহই নয়, এটি আমাদের মহাবিশ্বে বসবাসের ধারণাকে আরও বিস্তৃত করে তোলে। এটি প্রমাণ করে, আমাদের সৌরজগতের বাইরেও অসংখ্য আশ্চর্যজনক গ্রহ রয়েছে যেগুলি হয়তো ভবিষ্যতে মানুষকে নতুন জগতের সন্ধান দেবে। হোক তা হীরার গ্রহ, নাকি আগুনের—প্রত্যেকটিই মহাবিশ্বের অপরূপ সৌন্দর্যের অংশ।

Post a Comment

মন্তব্য করতে পারেন

Previous Post Next Post