বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ধরে নিচ্ছিলেন যে, আমাদের মহাবিশ্ব isotropic অর্থাৎ সব দিকে একরকমভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, কোনো নির্দিষ্ট দিক বা অক্ষ বরাবর এতে কোনো পূর্বনির্ধারিত গতি বা ঘূর্ণন নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই প্রচলিত ধারণায় ধাক্কা দিয়েছে। একদল গবেষক নতুন করে দাবি করেছেন, মহাবিশ্ব হয়তো নিছক সম্প্রসারিত হচ্ছে না—বরং এটি নিজেই ঘুরছে, নিজের অক্ষে আবর্তিত হচ্ছে। যদি এই ধারণা সত্য হয়, তবে তা কসমোলজির বর্তমান ভিত্তিকে একেবারে নতুন আলোয় দেখাবে।
এখানেই সেই ভিডিও দেখুন ▶️
এই গবেষণাটি মূলত গামা-রে বার্স্ট (Gamma Ray Bursts বা GRBs) নামক একধরনের শক্তিশালী মহাজাগতিক বিস্ফোরণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। গামা রে বার্স্ট হচ্ছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আলো বিস্ফোরণগুলোর একটি, যা সাধারণত খুব অল্প সময় স্থায়ী হয়, কিন্তু অসীম শক্তি নিঃসরণ করে। গবেষক দল ৮০০-র বেশি গামা রে বার্স্ট বিশ্লেষণ করে লক্ষ্য করেছেন যে, এদের মধ্যে অনেকগুলোর আলো একটি নির্দিষ্ট দিক বরাবর সামান্য মাত্রায় একরকম প্যাটার্ন দেখাচ্ছে, যা এমন এক ঘূর্ণনের ইঙ্গিত দেয়, যা মহাবিশ্বের একটি নির্দিষ্ট অক্ষ বরাবর হতে পারে।
এই পর্যবেক্ষণ যদি সত্যিই মহাবিশ্বের ঘূর্ণনের প্রমাণ হয়, তবে এটি হবে জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্ব এবং বিগ ব্যাং মডেলকে নতুনভাবে ব্যাখ্যার এক বিরাট ধাপ। কারণ এখন পর্যন্ত আধুনিক কসমোলজিতে আমরা ধরে নিই যে, মহাবিশ্ব isotropic এবং homogeneous—যার অর্থ, এটি সব দিকে একইরকম এবং কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই। কিন্তু মহাবিশ্ব যদি ঘুরতে থাকে, তবে তার একটি নির্দিষ্ট অক্ষ থাকতে হবে, একটি "preferred direction" থাকতে হবে। যা কসমোলজির কপের্নিকান নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে, যেখানে বলা হয় মহাবিশ্বে কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা দিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
এছাড়া এই ঘূর্ণনের উপস্থিতি কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (CMB) বিকিরণের মধ্যেও মিলতে পারে, যেখানে আগে থেকেই কিছু অনিয়ম, যেমন "axis of evil" বলে পরিচিত কিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া গেছে। যদিও এই অনিয়মগুলোর প্রকৃত কারণ এখনো অনিশ্চিত, নতুন এই ঘূর্ণন তত্ত্ব হয়তো এসব রহস্যের উত্তর দিতে পারে।
তবে গবেষকরা এটাও বলছেন, এই পর্যবেক্ষণ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এবং একে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরার আগে আরও বিশদ গবেষণা, বিভিন্ন উৎস থেকে ডেটা যাচাই এবং অন্যান্য স্বাধীন গবেষণা দলের বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যদি এই ধারণা আরও শক্ত ভিত্তি পায়, তবে আমরা এক নতুন মহাজাগতিক বাস্তবতার মুখোমুখি হব—একটা ঘূর্ণায়মান মহাবিশ্ব, যা আমাদের অবস্থান এবং মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পুরো ধারণাকে পাল্টে দিতে পারে।
সুতরাং, মহাবিশ্ব কি সত্যিই ঘুরছে? হয়তো, কিংবা নয়ও। তবে বিজ্ঞান এমনই—প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়। এই নতুন আবিষ্কার আমাদের সেই উত্তেজনাকর অনুসন্ধানের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে দিল।