বিশ্বের সবচেয়ে গভীর প্রাকৃতিক গহ্বর হিসেবে পরিচিত মারিয়ানা ট্রেঞ্চ আজও এক রহস্যঘেরা স্থান, যা বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে রেখেছে বহু বছর ধরে। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত এই গভীর খাদটির গভীরতা প্রায় ১১,০৩৪ মিটার—যা এতটাই নিচে যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট সেখানে উল্টোভাবে বসালেও তা পুরোপুরি ডুবে যাবে।
এই ভয়ঙ্কর গভীরতায় কোনো সূর্যের আলো পৌঁছায় না, তাপমাত্রা প্রায় বরফ শীতল এবং পানির চাপ এমন যে সাধারণত ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সেখানে পৌঁছেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এত প্রতিকূল পরিবেশেও সেখানে বসবাস করছে কিছু অদ্ভুত ও অজানা সামুদ্রিক প্রাণী, যাদের গঠন, আচরণ ও বেঁচে থাকার কৌশল বিজ্ঞানীদের কাছে আজও এক রহস্য।
এই খাদে মিলেছে স্বচ্ছ দেহের মাছ, আলোবিমুখ জীব এবং এমন সব প্রাণী যারা বিকট দাঁত ও বিশালাকৃতির চোয়াল নিয়ে তৈরি, যা কোনো বিজ্ঞান কল্পকাহিনিকেও হার মানায়। বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, এরা হয়তো পৃথিবীর সাধারণ বিবর্তনের বাইরে কোনো অজানা পথে জীবনকে টিকিয়ে রেখেছে।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ ঘিরে রয়েছে বহু ষড়যন্ত্রতত্ত্ব। কেউ বলেন, সেখানে লুকিয়ে থাকতে পারে অতীতের কোনো ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতার চিহ্ন কিংবা প্রাচীন প্রযুক্তি। আবার কেউ কেউ ধারণা করেন, এ খাদই হতে পারে এমন এক প্রাকৃতিক গবেষণাগার যেখানে বিকশিত হচ্ছে এমন সব প্রাণ, যাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হলে বদলে যেতে পারে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য নিয়ে বর্তমান সব ধারণা।
যদিও কয়েকটি রোবট ডুবোযান ও সাবমেরিনের মাধ্যমে এই খাদে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে, তবুও এখনো পর্যন্ত এর প্রকৃত রহস্য খুব অল্পই উন্মোচিত হয়েছে। গভীর অন্ধকারে ঢাকা এই জগতের রহস্য উন্মোচনের প্রতীক্ষায় রয়েছে বিশ্ব, যেখানে প্রতিটি মিটার গভীরতায় লুকিয়ে আছে চমকে দেওয়ার মতো একেকটি গল্প।
পৃথিবীর বুকে এখনো এমন অনেক স্থান রয়ে গেছে, যা আমাদের পরিচিত জগৎ থেকে একেবারেই আলাদা—একান্তই গোপন, ভয়ঙ্কর এবং বিস্ময়কর।